বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২০ অপরাহ্ন

খাতুনগঞ্জে তেল চিনি পেঁয়াজ ডালসহ বহু ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে

খাতুনগঞ্জে তেল চিনি পেঁয়াজ ডালসহ বহু ভোগ্যপণ্যের দাম কমেছে

স্বদেশ ডেস্ক:

সরকারের পক্ষ থেকে আমদানি শুল্ক হ্রাস ও বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে কমতে শুরু করেছে ভোজ্য তেলের দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন তেল কেজিতে ৮ টাকা কমেছে। আর ৫ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন কমেছে প্রায় ১৫-২০ টাকা।

শুধু ভোজ্যতেল নয়, পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দামও কমতে শুরু করেছে। দেশের অন্যতম পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে রমজানের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ এবং ডালের দামও কমেছে। পেঁয়াজের দাম তিন-চার দিনের ব্যবধানে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। আর ছোলার দাম মণপ্রতি ১০০ টাকা কমেছে।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো: জাহাঙ্গীর আলম শুক্রবার (১৮ মার্চ) বাসস’কে বলেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাত দিয়ে কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী বাজার অস্থির করার চেষ্টা করেছিল। বিশেষ করে সয়াবিন তেলের বাজারেতীব্র অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। চট্টগ্রামের চার ব্যবসায়ীর কারসাজির কারণে এখানকার বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। ভোজ্য তেল থেকে শুরু করে সব ভোগ্যপণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে।

দেশের অন্যতম পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে রোজার অত্যাবশকীয় পণ্য ছোলার দাম মণপ্রতি ১০০ টাকা কমেছে বলে জানান আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হাজি স্টোরের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন মিন্টু। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভোগ্যপণের দাম কিছুটা সহনীয় রয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম মণপ্রতি ১০০ টাকা কমেছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা ভালো মানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ২৪০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে তা ২৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। আর মধ্যমানের ছোলা বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ২২৩০ টাকা।

জয়নাল আবেদীন মিন্টু বলেন, ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আমদানির পাইপলাইনে রয়েছে সব ধরণের পণ্য। এর ফলে পণের দাম কমতির দিকে রয়েছে।

তবে ডালজাতীয় পণ্যের দাম তেমন কমেনি। রাশিয়া থেকে আমদানি করা মটরশুঁটির দাম কিছুটা বেড়েছিল। কিন্তু সরবরাহ বাড়ায় তা কেজিতে তিন টাকা কমেছে। ১৫ দিন আগে রাশিয়ার মটর কেজিতে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। দেশি মসুর ডাল (চিকন) বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২০ টাকা। অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা মোটা মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা দরে। মসুর ডাল অনেকটা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

তবে পাইকারি মোকামে পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ভারতীয় আমদানি করা ভালো মানের পেঁয়াজ এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৪৫ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৭-২৮ টাকা। ছোট আকারের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৪-২৫ টাকা। মিয়ানমারের পেঁয়াজও ৪৫ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ২৭-২৮ টাকা। কলকাতার হাঁসখালীর পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে কমে ২৫ টাকা, মেহেরপুরের পেঁয়াজ ৩২ টাকা থেকে কমে ২০-২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে।

চায়না থেকে আমদানি করা রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৯০-৯৫ টাকা দরে। সপ্তাহখানেক আগে তা ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। দেশি রসুন (নতুন) বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা ও পুরোনো রসুন ২০-২২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

খাতুনগঞ্জের আড়তদার জাবেদ ইকবাল বাসস’কে জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ভারতে পেঁয়াজের ফলন ভালো হওয়ায় সরবরাহ বেড়েছে। গত তিন দিনে অন্তত ৪০০ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে পাইকারি মোকামে। উৎপাদন বৃদ্ধি ও সরবরাহ বাড়ার কারণে বাজারে বড় প্রভাব পড়েছে। দাম কমে গেছে। রোজার আগে আর বাড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।

এদিকে, নাভিশ্বাস তোলা ভোজ্যতেলের বাজারও কমতির দিকে রয়েছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোলা সয়াবিন কেজিপ্রতি অন্তত ৮ টাকা কমেছে বলে জানান নগরের ২ নং গেট ষোলশহর কর্ণফুলী কমপ্লেক্স কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ ইয়াকুব চৌধুরী। তিনি বলেন, খোলা সয়াবিন কেজিপ্রতি ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহখানেক আগে তা ১৬৮-১৭০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়েছিল। পাম তেলও ১৬২ টাকা থেকে কমে ১৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ী নেতা ইয়াকুব চৌধুরী বলেন, ৫ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিনের দামও বোতলপ্রতি ১৫-২০ টাকা কমেছে। তবে ভোজ্যতেল আমদানি ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকার নজরদারি করলে দাম আরও কমবে বলে জানান তিনি।

পাইকারি মোকাম খাতুনগঞ্জে সয়াবিন তেলের ডিও বিক্রি হয়েছে মণপ্রতি ৫০৫০ টাকা। কয়েকদিন আগে তা ৫৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল বলে খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির নেতা জয়নাল আবেদীন মিন্টু। তিনি বলেন, সরকার ভোজ্যতেলের বাজার সহনীয় পর্যায়ে আনতে শুল্ক কমিয়েছে। এতে আমদানি ও সরবরাহ বেড়েছে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

এদিকে, এক সপ্তাহের ব্যধানে চিনির মূল্য প্রতি মণে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কমেছে। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক ও খাতুনগঞ্জের শীর্ষ চিনি ব্যবসায়ী আলমগীর পারভেজ বাসস’কে জানান, বর্তমানে বাজারে চিনির পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। বাজার এখন পড়তির দিকে। গত সপ্তাহে প্রতি মণ চিনি বিক্রি হয়েছে ২৭৩০ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ২৬৫০ থেকে ৬০ টাকা।

তিনি বলেন, মিল মালিকরা কোনো কারসাজি না করলে আসন্ন রমজানসহ সাম্প্রতিক সময়ে চিনির দাম বাড়ার কোনো আশঙ্কা দেখছি না।

সূত্র : বাসস

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877